গল্পের বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে বাংলা বই একটু কমই পড়া হয়। তবে এই কদিন আগে দুটো বই পড়লাম,আর দুটোই বাংলা। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা "আমি রবি ঠাকুরের বউ" আর "কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড নোট"।
বাঙালী হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে পড়তে ভালো না লাগাটা এক প্রকার অস্বাভাবিক বলা যায়। কিন্তু এই বই দুটো একটু অন্যরকম। যিনি অতপ্রত ভাবে আমাদের জীবনের সাথে জড়িত,যার কবিতায়,গানে আমাদের বেঁচে থাকার পরিপূর্ণতা,সেই রবিঠাকুরের জীবনের এক অন্য দিক এই উপন্যাস গুলির মধ্যে পাওয়া যায়। এই লেখাগুলির গ্রহণযোগ্যতা এক্কেবারেই ব্যক্তিগত। যেই বেক্তির, একান্ত বেক্তিগত জীবন নিয়ে লিখেছেন রঞ্জনবাবু, তিনি ভাষার জাদুগর, আবেগ এর প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের প্রতিটি মানসিক অনুভূতির প্রকাশ দারের স্রষ্ঠা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই তাঁর জীবনের আবৃত গল্পগুলির সন্ধান পেতেও কোথাও যেন একটু কুন্ঠা বোধ হয়।
শুরু করছি কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড নোট দিয়ে,কারণ এটাই আমি প্রথম পড়েছি। বইয়ের শুরুতে, এবং রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে জানতে পারলাম, যে তিনি অনেক গবেষণার পর, এই উপন্যাসটির মধ্য দিয়ে কল্পণা করেছেন যে রবিঠাকুরে আদরের নতুন বৌঠান তাঁর শেষ চিঠিতে কি কি লিখতে পারেন। বলা বাহুল্য যে চিঠিটি তার স্নেহের ঠাকুরপোকেই উদ্দেস্য করা হযেছিল। এই উপন্যাসটি মূলত লেখকের কল্পণা, যদিও তিনি বলেছেন যে এতে এমণ কিছুই তিনি লেখেননি, যা কাদম্বরীদেবী লেখেননি বা লিখতে পারেন না। এই নোটটি রবিঠাকুর আর তাঁর পরম ভালবাসার নতুন বৌঠানের আত্মিক সম্পর্কের সাক্ষ্য। কি ভাবে কাদম্বরীদেবী তাঁর ঠাকুরপোর সাহিত্য চর্চার অনুপ্রেরণা ছিলেন আবার কি ভাবে তিনি ছিলেন তাঁর সব চেয়ে বড় সমালোচক, সবই আছে এই নোটে। আর আছে নতুন বৌঠানের করুণ একাকিত্বের আর্তনাদ "রবি,রবি ", রবি ছাড়া যে ওই প্রকান্ড অট্টালিকায় কেউ ছিল না তাঁর।ঠিক বেঠিকের উর্ধ্যে তাঁদের এই পরম বন্ধুত্ব। এতটাই গভীর যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ের কিছু মাসের মধ্যেই আত্মঘাতী হন তিনি। আর রবীন্দ্রনাথ সারা জীবণ তাঁর নতূন বৌঠানের স্মৃতিকে আপন করে ছিলেন। তাদের সম্পর্কের সব প্রমাণ আড়াল করা হযেছিল বলে লিখেছেন লেখক।বিষ খাবার পর, দুদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পর, অবশেষে শেষ হয় এক বিরল প্রনয় কাহিনী।
এবার আসি আমি রবি ঠাকুরের বউ উপন্যাসে। এটি আবার আরেক নারীর একাকিত্বের নজির। তিনি আর কেউ নন সয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহধর্মিনি মৃণালিনীদেবী।পাঠক হিসাবে এইটিই আমার বেশি ভালো লেগেছে। এই উপন্যাসো লেখকের কল্পণার প্রতিবিম্ব, যার হেতু গবেষণা আর রবিঠাকুরের প্রতি আসক্তি।বিশাল পরিবার, প্রভাবশালী বংশ, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি শুধু সাহিত্যের ভূমি না, অনেক অজানা, অচেনা কাহিনী চাপা প্ররেছে সময়ের নিচে সেই অট্টালিকায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে প্রাণপনে তার নতুন বৌঠানকে ভালোবেসেছে, যার জীবণে এসেছে আরো অনেক নারী, কেমন ছিল তার স্ত্রী হবার সুক ? হয়ত লেখক সেটাই ভাববার চেষ্টা করেছেন এই রচনার মাধ্যমে। বিয়ের আগের নাম ভাবতারিনি পাল্টে হলেন মৃনালিনী, কিন্তু পদ্মফুলের এই রাশি পেরেছিল কি কবিগুরুর প্রেরণা হতে? নাকি শুধুই ছিলেন তাঁর সন্তানদের মা ? তারি উত্তর এই রচণা। যার স্বামী রবীন্দ্রনাথ, তার নিজের পরিচয কি ? কোথায় যেন কাদম্বরীদেবী আর মৃণালিনীদেবী, দুজনে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন , রবীন্দ্রনাথকে পেয়েও না পাওয়ার কষ্ট।
এই দুটি রচনাই কাল্পনিক,কিন্তু অবান্তর না। রবিঠাকুর এর সাহিত্যের সমুদ্রকে কি,ঠিক ভুল, সামাজিক অসামাজিক, এর ঘেরাটোপে বাঁধা যায় ? আর অনুপ্রেরণা ছাড়া কি তা সম্ভব? তার সৃষ্টির আকলন তো সকলেই চাইবে, কিন্তু পাবে কি? আর না পাওয়ার তাপ কি এতই পচ্য ? এই দুই নারীই খুব একা 'ছিলেন, কষ্টও পেয়েছেন অনেক, তবুও তাদের জীবণের সার্থকতা হয়ত এটাই, সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে তারা এই জগতকে দিয়েছেন আরো একটু রবি ঠাকুর।
অরিত্রা চক্রবর্তী সেনগুপ্ত
Khub bhalo laglo lekhata pore. boi duto porar ichchhe roilo.
ReplyDeletethanks a lot...:-)
Deleteপ্রথম বইটা আমার তেমন ভাল লাগেনি, আগেই বলেছি। আর দ্বিতীয়টা আমি পড়িনি :-) তবে তোমার লেখাটা ভাল লাগল।
ReplyDeleteThanks....:-)
Delete